Sunday, June 23, 2019

আমার রাতের আকাশ

 

প্রথম পর্ব 
কথায় বলে না বিপদ  কখন ও বলে কয়ে  আসে না আবার একা ও আসে না ..ঠিক তাই ঘটলো আমার সাথে ..সবে অষ্টম  শ্রেণীর  ফল ঘোষণা হলো ,,মোটামোটি সব বিষয়ই  পাশ করে গেলাম ..শুধু  ইংরাজীতে সাতাশ নম্বর জুটলো ..গ্রামের বিদ্যালয়ে একমাত্র শিক্ষক ,,,,ছাত্র /  ছাত্রী সত্তর  ..যতটুকু  জ্ঞান শ্রেণীকক্ষ থেকে ই জুটাতে হতো ,,আলাদা কোনো সুযোগ সুবিধে  নেই ..আনপড়ে বাবা মা ..কোনো রকম নিজের নাম খানা লিখতে পারতেন ,,ছয়জন  ভাই বোন  ,,,আমি তিন নম্বরে  আসি .বড়ো দাদা ছোট বেলাতেই  শহরের এক বাবুর  বাড়ী চলে যায় ,,ওখানেই  থাকে ,,মাঝে মধ্যে এক আধঘন্টার জন্য এসে পিতৃ -  মাতৃ ঋন শোধ করে যায় ....তার পর এক দিদি  কানে শোনে না ,কথা ও বলতে পারে না ...বাড়ীতে হেঁসেলে মায়ের হাত বাটিয়ে নিজের অস্তিত্ব  বজায় রাখে ...
                         ঝড়ো রাত,,,চারদিকে জল থৈ থৈ ..গাছপালা গুলো একবার ভূমিলুন্ঠিত  হচ্ছে আবার আকাশের দিকে মাথা উঁচু  করে যেন প্রতিবাদ জানাচ্ছে  ,,,দক্ষিণ কোণের চাল টা অনেকদিন সারাবে  সারাবে বলে আর সরানো  হয় নি ...বৃষ্টির জল পরে বিছানা পত্তর ভিজে  একাকার ,,,উনুনের  ধারের  যে মাটির  দেয়ালটা ওটাও  কিছুটা ভেঙে গেছে ,,,ওদিকে  বৃষ্টির জল ঢুকে উনুনটা  নিভিয়ে দিলো ..মা আর আমার কালাবোবা দিদি গালে  হাত দিয়ে হা করে বসে ,,,ছোট দুটো ডরেভয়ে এক কোণে যেয়ে ঘুমিয়ে পড়লো ...
                        এবাড়ীর ওবাড়ীর উঠোন ঝাড়ু  দিয়ে ,চাল  ঝেড়ে  দিয়ে কিছু কড়ি জমিয়ে  মা একখানা দেয়াল ঘড়ি কিনেছিলেন ,,,তাকিয়ে দেখলাম রাত প্রায় এগারোটা ,,বাবা এখনো  এলেন  না !!!  একটু বেরিয়ে যেয়ে দেখে এসব তার ও কোনো জো নেই ,,,অপেক্ষা করতে রইলাম রাতভর  ,,,,
                       সবে কাক  ডাকতে শুরু করেছে ,,আজ যেনো একটু বেশী ই ডাকছে ,,,বৃষ্টি কমেছে  ,কিন্তু তার বিধ্বংস অস্তিত্ব বলে দিচ্ছে কি ভয়ানক রাতই না ছিল কাল ,,,গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়ী ই ক্ষতিগ্রস্ত ,,গরিব গ্রামবাসী কবে যে সারাতে পারবে নিজ নিজ বাড়ী ঘর স্বয়ং ভগবান ই জানেন  ..
                      হটাৎ গোপালের  আওয়াজ  কানে এলো ..কাকিমামামামা...কাকিমামামা ...
আওয়াজটার মধ্যে ভয়, দুঃক্ষ ,আতঙ্ক সব মেশানো ...জিজ্ঞাসা করতে আমতা আমতা করে বললো কাকাবাবুর  লাশ  ওই ঝিলের  পাশে পরে আছে ..
বাকশক্তি হারিয়ে ফেললাম ,,,,,এ কি কথা ;;;;, কাকাবাবু  মানে আমার বাবা লাশ হতে যাবেন কেনো ?? তিনি তো সুস্থ সবল  মানুষ হাঁটে যাবেন বলে কাল বেরিয়েছিলেন  ,,,
মাকে নিয়ে দৌড়িয়ে  ঝিলের পাশে যেয়ে দেখি এতক্ষনে গ্রামবাসী জড়ো হয়ে গেছেন ...গ্রামের হাতুড়ে  ডাক্তার বাবু  নাড়ি টিপে বলে দিলেন বেঁচে নেই ...ছ সাত ঘন্টা আগেই  তিনি মারা গেছেন ...নিজেকে শক্ত করা ছাড়া আর কোনো উপায় রইলো না ,,,পুরোনো একটি কেলেণ্ডারের  পিছনে দাদা তার শহুরে  বাবুর টেলিফোন নম্বরটা লিখে দিয়ে গেছিলো ,,,,গোপালকে  বললাম রায়  বাড়ীর টেলিফোন থেকে দাদাকে  একটা খবর জানিয়ে দিতে ...প্রায় তিন ঘন্টা অপেক্ষা করার পর দাদা এসে বাবাকে শ্মশানে  নিয়ে গেলো ...
সেই রাতের ঝড়টা  আমাদের জীবনে অভিশাপ  হয়ে এলো ...বাবাকে চিরদিনের  জন্য হারালাম ,,,বাবার মৃত্যুর  কারণটাও  অজানা থেকে গেলো ...কোনো রকম শ্রাদ্ধ ,শাকস্পর্শ ,মাছস্পর্শ সেরে দাদা তার নিজের ডেরায় ফিরে গেলো ...বোকা মা ,বোবাকালা দিদি আর ছোট ভাই বোন দুটো আমার দায়িত্ব ...গ্রামবাসীরা অনেকটাই সাহায্য করলো আমাদের এই বিপদের  দিনে ,,,কিন্তু এভাবে  কতদিন ,,,,,তাই আমি এবার কাজের খোঁজ করতে লাগলাম ,,,
কাজের অন্বেষণে আমি যখন এর দোর ওর দোর ঘুরছি  গোপাল  একটি সুখবর  নিয়ে এলো ...
                        মাধবী মুখার্জী  ,,,,,একজন নামিদামী মহিলা গরিব মেয়েদের কাজের সুযোগ করে দেন  ...তিনি আমাদের গ্রামে আসবেন  কাল....মনে হলো এবার বোধহয়  ভগবান একটু মুখ তোলে চাইবেন  ..গোপালের কথানুযায়ী গ্রামের ক্লাবঘরে  উনার সাথে দেখা করতে গেলাম ,, গোপালের হাবভাব দেখে মনে হলো উনার সাথে ভালোই  পরিচয়  আছে ...পাশের গাঁয়ের পূর্ণিমা ,রাখি ,মিতালি সবাই উনার অধীনে কাজ করে ...ওদের চাকুরী গোপালই জোগাড় করে দিয়েছে ....আশার আলো প্রজ্জ্বলিত  করে উনার সম্মুখে যেয়ে দাঁড়ালাম ,,,,খুব সুন্দরী ,,,থিয়েটার জগতেই  এমন রূপের সন্ধান মিলে,,,,....
                           অনামিকা (  Anamika )..

No comments:

Post a Comment